হাওজা নিউজ এজেন্সি: হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন আলী নওয়াজ খান তার এক নিবন্ধে লিখেছেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,
يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، يَكُونُ بُطُونُهُمْ آلِهَتَهُمْ، وَنِسَاؤُهُمْ قِبْلَتَهُمْ، وَدَنَانِيرُهُمْ وَدَرَاهِمُهُمْ دِينَهُمْ، وَشَرَفُهُمْ مَتَاعُهُمْ، لَا يَبْقَى مِنَ الْإِيمَانِ إِلَّا اسْمُهُ، وَلَا مِنَ الْإِسْلَامِ إِلَّا رَسْمُهُ، وَمَسَاجِدُهُمْ عَامِرَةٌ وَهِيَ خَرَابٌ مِنَ الْهُدَى، وَعُلَمَاؤُهُمْ شَرُّ مَنْ تَحْتَ أَدِيمِ السَّمَاءِ، مِنْهُمْ تَخْرُجُ الْفِتْنَةُ وَفِيهِمْ تَعُودُ...
“মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের পেট হবে তাদের উপাস্য, নারীরা হবে তাদের কিবলা,
দিরহাম-দিনার (সম্পদ) হবে তাদের ধর্ম এবং মর্যাদা ও গৌরব নির্ধারিত হবে কেবল জাগতিক বস্তু ও বিলাসিতায়।
তখন মানুষের মধ্যে থেকে ঈমানের থাকবে কেবল নাম,
ইসলামের থাকবে কেবল চিহ্ন, আর কুরআনের থাকবে শুধু পাঠের আওয়াজ, কিন্তু হৃদয়ের গভীরে তার হেদায়েত ও প্রভাব থাকবে না।
তাদের মসজিদগুলো হবে দৃষ্টিনন্দন ও জাঁকজমকপূর্ণ,
কিন্তু হৃদয়গুলো থাকবে হেদায়েত ও খুশু থেকে শূন্য।”
নবী করিম ﷺ হাদীসের ধারাবাহিকতায় বলেন—
“তাদের আলেমরা হবে আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মধ্যে সবচেয়ে অধঃপতিত ও নিকৃষ্ট চরিত্রের মানুষ।”
এরপর রাসুলুল্লাহ ﷺ সতর্ক করে বলেন— “সেই যুগে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে চারটি কঠিন পরীক্ষায় আক্রান্ত করবেন:
১. শাসকের জুলুম ও অত্যাচারে
২. খরা ও দারিদ্র্যের অভিশাপে
৩. শাসনকর্তাদের অন্যায় ও নিপীড়নে
৪. বিচারকদের অন্যায় রায়ে ও দুর্নীতিতে
সাহাবাগণ বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন— “হে আল্লাহর রাসুল ﷺ! তারা কি আবার মূর্তি পূজা করবে?”
নবী ﷺ উত্তর দিলেন— “হ্যাঁ! তাদের প্রতিটি দিরহাম ও দিনারই হবে তাদের মূর্তি।”
[উসুল আল কাফী গ্রন্থ, আল-কুলাইনী, দ্বিতীয় খণ্ডের ৩৪২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে]
গভীর বার্তা
এই হাদীস আমাদের জন্য এক গভীর সতর্কবার্তা— যে যুগে মানুষ দুনিয়াকে ধর্মের স্থানে বসাবে, যেখানে সম্পদ হবে উপাস্য, নারী হবে কিবলা, পেট হবে ঈশ্বর, সেই সময়েই মানবতা, ঈমান ও হেদায়েত হারিয়ে যাবে অন্ধকারে।
এই বাস্তবতার বিরুদ্ধে ঈমানদারদের দায়িত্ব হলো নিজেদের আত্মা, পরিবার ও সমাজকে ফিতনার এই ঝড় থেকে রক্ষা করা; আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, সত্যকে আঁকড়ে ধরা এবং নৈতিকতা ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা।
আমরা এমন এক সময়ের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি, যার বহু লক্ষণ ইতোমধ্যেই আমাদের সমাজে দৃশ্যমান। এই হাদীস শুধু ভয়াবহ ভবিষ্যতের চিত্র নয়, বরং আমাদের জন্য একটি আত্মসমালোচনার আয়না।
যদি আমরা এখনই ঈমান, নৈতিকতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মনোযোগ না দিই, তবে সেই সতর্কবার্তা আমাদের সমাজেই বাস্তব রূপ পাবে।
اللهم احفظنا من فتن آخر الزمان
(হে আল্লাহ! শেষ যামানার ফিতনা থেকে আমাদের হেফাজত করুন)
আপনার কমেন্ট